Advertisement

শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে বক্তব্য স্পষ্ট করলেন রাষ্ট্রপতি

শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিসয়টিকে মীমাংসিত উল্লেখ করে এ বিষয়ে নতুন করে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না করা এবং সরকারকে অস্থিতিশীল বা বিব্রত না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

সোমবার রাতে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ইস্যুতে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন মিডিয়ায় যে প্রচারণা চালানো হয়েছে তা জনমনে বিভ্রান্তির সৃস্টি করেছে। এ বিষয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সুস্পস্ট বক্তব্য হচ্ছে, ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও দেশত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার উপর যত ধরনের প্রশ্ন জনমনে উদ্রেক হয়েছে সেগুলোর যাবতীয় উত্তর স্পেশাল রেফারেন্স নং-০১/২০২৪ এ মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের গত ৮ আগস্ট, ২০২৪ এর আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে।

‘উল্লেখ্য, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি ৮ আগস্ট, ২০২৪ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামত চাওয়ার প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ এই মতামত দিয়েছিলেন। মীমাংসিত এই বিষয়ে নতুন করে কোনো বিতর্ক সৃস্টি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল কিংবা বিব্রত করা থেকে বিরত থাকার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।’

ছাত্রসমাজ ও আলেম সমাজকে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে : মামুনুল হক

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ‘৫ আগস্ট একটি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ রূপান্তরিত হওয়ার স্বপ্ন মানুষের চোখে ভেসে উঠেছে। ছাত্রসমাজ ও আলেম সমাজকে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সব ইসলামপন্থি দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কেউ যাতে ঐক্য বিনষ্ট করতে না পারে, সেদিকে ছাত্র এবং উলামায়ে কেরামকে সচেতন থাকতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে বাগেরহাট জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে বাগেরহাট জেলা খেলাফত মজলিসের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিনতাইয়ের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী বন্ধুরূপী রাষ্ট্র বাংলাদেশের বুকের ওপর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী নীতিমালার আলোকে গণঅভিপ্রায় বিরোধী সংবিধান বাংলাদেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল।’

মামুনুল হক বলেন, ‘হিন্দুরা যত ইচ্ছা মূর্তি তৈরি করতে পারবে; কিন্তু মুসলমানের কোনও স্থাপনার সামনে মূর্তি থাকতে পারবে না। হিন্দুদের পূজাকে সামনে রেখে নৈরাজ্যবাদীরা যাতে কোনও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে খেলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলামসহ সব ইসলামি দলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। হিন্দুদের কোন মুর্তিতে কেউ হাত দেয়ার চেষ্টা করলে সেই হাত ভেঙ্গে দেয়া হবে।’

‘আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছিল বিভাজনের রাজনীতি। আমরা আর বিভাজন চাই না, আমরা সবাই মিলে একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবো। সেখানে সব ধর্মের লোক সমান অধিকার ভোগ করবে।’ বলে উল্লেখ করেন মাওলানা মামুনুল হক।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বাগেরহাট জেলা শাখার আহ্বায়ক মাওলানা রমিজউদ্দীনের সভাপতিত্বে সভায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যয়ের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একমাসে ১৯৮ অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে 

আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দায়িত্ব গ্রহণের একমাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ১৯৮টি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অতি স্বল্প জনবল নিয়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করা হলেও প্রথম দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে পাঠানো বিবিধ প্রস্তাব বিষয়ে দ্রুত গতিতে এবং আইনগত সব বাধ্যবাধকতা মেনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত একমাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ১৯৮টি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনপ্রশাসনের ১৩৫ জন অতিরিক্ত সচিব, ২২৭ জন যুগ্মসচিব ও ১২০ জন উপসচিবকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, এখন পর্যন্ত ৫৯টি জেলার জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং নতুন ৫৯ জন জেলা প্রশাসককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৬৭ জন কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। ১০ জন যুগ্ম সচিব, ৮ জন অতিরিক্ত সচিব এবং ৬ জন সচিবকে ওএসডি করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের ৮০ জন ডিআইজি, ৩০ জন পুলিশ সুপারসহ ১১০ জনকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। একজন ডিআইজি, একজন এডিশনাল ডিআইজি এবং চারজন পুলিশ সুপারকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়েছে। আইজিপিসহ ১০ জন অতিরিক্ত আইজি, ৮৮ জন ডিআইজি, ২১ জন অ্যাডিশনাল ডিআইজি এবং ১৭৭ জন পুলিশ সুপারসহ মোট ২৯৭ জন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।

ছয়টি কমিশনের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সরফরাজ চৌধুরী, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. শাহদীন মালিক দায়িত্ব পালন করবেন।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এসব কমিশনের অন্য সদস্যদের নাম কমিশন প্রধানদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। কমিশনগুলোর আলোচনা ও পরামর্শসভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছাত্র, শ্রমিক, জনতা আন্দোলনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।

পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ আগামী পয়লা অক্টোবর থেকে শুরু করতে পারবে বলে আশা করছি এবং এটি পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আমরা ধারণা করছি। কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে পরামর্শ সভার আয়োজন করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্র সমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এই রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার একটি ধারণাও দেয়া হবে।

এই আয়োজন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্তা বাস্তবায়ন এবং রাষ্ট্র পুনঃনির্মাণ তাগিদের ঐক্যবন্ধনে গোটা জাতিকে শক্তিশালী ও আশাবাদী করে তুলবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

 

গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ ২৫ কারখানায় ছুটি ঘোষণা

গাজীপুরে বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় কারখানায় ভাঙচুর, মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন দাবি জানানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৫টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে জেলার টঙ্গী, মহানগর, শ্রীপুর জয়দেবপুর এর বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকদের আন্দোলন শুরু হয়। দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সকাল ৯টা থেকে গাজীপুরের টঙ্গীতে ১৩ দফা দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করে এমট্রানেট গ্রুপ লিমিটেড নামে কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় তাদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন পিনাকি গ্রুপ, ড্রেস ম্যান ও নোমান গ্রুপের শ্রমিকরা। পরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শ্রমিকও অংশ নেন। দুপুর আড়াইটার দিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ, পুলিশ আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের দাবি মেনে নেন। পর এমট্রানেট গ্রুপের মানবসম্পদ কর্মকর্তা সুজন, লাকি, সফিউল্লাহ, সুমন, পিএম মো. রানা, রফিক, সুপারভাইজার মুসা, নিলুফা, শান্তা, পিএম ফরিদ ও ওয়াহিদের পদত্যাগের দাবিতে বিকেল ৩টার পর থেকে আবারও আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা।
টঙ্গীর এমট্রানেট গ্রুপের শ্রমিক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের দাবিগুলো কয়েক বছর যাবৎ মৌখিক ও লিখিতভাবে উপস্থাপন করে আসছি। আজ মঙ্গলবার সকালে আমরা পাঁচটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা একত্রে মিলে আমাদের দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলন করছি।
অপরদিকে,শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকার মেঘনা গ্রুপের হাই ফ্যাশন কারখানার শ্রমিকরা ১৪ দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় পার্শ্ববর্তী হাউ আর ইউ টেক্সটাইল লিমিটেডের শ্রমিকদের বের করে আনতে গেলে হামলার শিকার হন হাই ফ্যাশনের শ্রমিকরা। এতে উত্তেজিত শ্রমিকরা হাউ আর ইউ টেক্সটাইলে ঢুকে ভাঙচুর চালান।
এদিকে, জেলার জয়দেবপুর থানার নতুন বাজার এলাকার এসএম নিটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকরা মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় কারখানায় প্রবেশ করে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে অ্যাসরোটেক্স লিমিটেডের শ্রমিকরা দুপুর ১২টার দিকে কারখানার প্রধান গেটে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হলে এসএম নিটওয়্যার ও অ্যাসরোটেক্স  লিমিটেডের শ্রমিকরা এ্যাপারেলস্-২১ লি. ও গ্রিন ফাইবার কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার গেটে গেলে কারখানা কর্তৃপক্ষ ওই দুটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেন। পরে দুপুর ১টার দিকে শ্রমিকরা যার যার অবস্থান থেকে সরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন,  কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার পর দুপুরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী, বিজিবির সঙ্গে মিলে পুলিশ কাজ করছে।

শেখ হাসিনার পতন ; অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আলোচনায় আছেন যারা

এস এম ইকবাল হোসেন, সম্পাদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালানোর পর দেশের ক্ষমতা বুঝে নিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

সোমবার বিকাল ৪টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সেনাপ্রধান এ তথ্য জানান।

সেনাপ্রধান বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা দেয়া হবে। তবে এই মুহূর্তে আমি সমস্ত দায়িত্ব নিচ্ছি। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীসহ দেশবাসীর সহযোগিতা চাই।

সেনাপ্রধানের ভাষণের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব কে নেবেন এমন প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানসহ যাদের নাম আলোচনায় আসছে তারা হলেন-

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এই সরকারে আরও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী, বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইকরামুল হক, সাবেক পরিবেশ সচিব ড. মাহফুজুল হক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিস ট্রাস্টের সাবেক পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন, সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা, বিজিবির সাবেক ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মঈনুল ইসলাম, নিউএইজ-এর সম্পাদক নুরুল কবির, সাবেক সচিব ফজলুল কবির খান, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) গোলাম হেলাল মোরশেদ খান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সাবেক ভিসি অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, আইনজীবী শাহদীন মালিক, অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর।

আন্তর্জাতিক গৃহশ্রমিক দিবস ২০২৪ ; ৪০ লাখ গৃহকর্মীকে শ্রমআইনে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান অক্সফ্যামের

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : বাংলাদেশের প্রায় ৪০ লাখ গৃহকর্মীকে শ্রমআইনে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ‘শ্রমিক’ হিসেবে স্বীকৃতির আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অক্সফ্যাম। আন্তর্জাতিক গৃহকর্মী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে রাজশাহীতে গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষায় আয়োজিত র‍্যালি, পথসভা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এই আহ্বানসহ ৯টি দাবি তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটি। সোমবার রাজশাহী শহরে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হন ‍দুই শতাধিক গৃহকর্মী, সরকারী কর্মকর্তা, উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
দিনব্যাপী আয়োজনে গৃহকর্মীদের সুরক্ষায় যে ৯টি দাবি তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো; শ্রম আইনে গৃহকর্ম পেশাকে অন্তর্ভূক্ত করা; গৃহকর্মীদের সামাজিক মযার্দা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া; গৃহকর্মে শিশুশ্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা; গহকর্মীদের প্রতি সকল প্রকার নির্যাতন বন্ধ করা; গৃহকর্মীদের নির্ধারিত কর্মঘন্টা, সাপ্তাহিক ছুটি, ন্যূনতম মজুরী নির্ধারণ করা, ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫ এর যথাযথ বাস্তবায়ন; গৃহকর্মীদের শোভন কাজ সংক্রান্ত আইএলও কনভেনশন ১৮৯ অনুসমর্থন, গৃহকর্মীদের মর্যাদা ও অধিকার সুরক্ষায় কাযর্কর উদ্যোগ গ্রহণ  এবং গৃহকর্মীর উপর নির্যাতনকারীর দ্রুত শাস্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা।
গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষায় আযোজিত র‌্যালী ও পথ সভার উদ্বোধন করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। তিনি বলেন, ‘গৃহকর্মীরা সমাজের বিচ্ছিন্ন কোন অংশ নয়। আমরা দেখেছি গৃহকর্মীরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। বৈষম্য ও নির্যাতনের  শিকার হলেও তারা সঠিক বিচার পান না। গৃহকর্মীরা নিয়োগের সময় কোনো চুক্তিপত্র পান না; দেয়া হয় না নির্ধারিত ছুটি। মাতৃত্বকালীন ছুটিও তাদের নেই। গৃহকর্মীদের পিছিয়ে রেখে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত সম্ভব নয়। তাই গৃহকর্মীদের সংবেদনশীল আচরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক পেশায় যুক্ত করতে সকলকে কাজ করা জরুরি।’
পথসভায় গৃহকর্মী মর্জিনা সুলতানা বলেন, ‘আমরা আপনার পরিবারের দায়িত্ব নিই বলেই  নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারেন। তবে আপনারা  আমাদের প্রাপ্য দিতে চান না। ৯৩ শতাংশ গৃহকর্মী মাতৃত্বকালীন ছুটি পান না।”   গৃহকর্মীর উপর নির্যাতনের আইনি কার্যক্রম সম্পন্নে হয়রানির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি আরো বেলন, “শ্রমিক হিসেবে কাজ করেও নিজেদের শ্রমিক বলতে পারি না। কারণ আমরা শ্রমআইনেই অন্তভুক্ত নই।” আমরা গৃহকর্মকে শ্রমআইনের অন্তর্ভুক্তি চাই।”
র‍্যালি ও পথসভা শেষে ‘গৃহকর্মী পেশায় নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায়: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অক্সফ্যাম ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধের উপস্থাপন করেন অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ এর প্রকল্প সমন্বয়ক তারেক আজিজ। । বিশ্বব্যাংকের ২০২১ এর তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেশের ৪০ লাখ গৃহকর্মীর কাজের মূল্য প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার। যা জিডিপির অন্তর্ভুক্ত নয় ।  এছাড়াও সুনীতি প্রকল্পের পরিচালিত ২০২২ এর গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, দেশের ৮৪ শতাংশ গৃহকর্মী দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করেন। ৮৭ শতাংশ  অনাবাসিক/খন্ডকালীন গৃহকর্মী কোনো সাপ্তাহিক ছুটি পান না। মাতৃত্বকালীন ছুটি পান না ৯৩ শতাংশ এবং কোনো গৃহকর্মীর নিয়োগপত্র নেই।’
গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ফিন্যান্স) জনাব মো. রশীদুল হাসান, পিপিএম, উপস্থিত ছিলেন। তিনি গৃহকর্মীদের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগোর পাশাপাশি নাগরিকসমাজকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানগুলোতে অতিথি হিসেবে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক এটিএম গোলাম মাহবুব, বিভাগীয় শ্রত অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম, সুজনের সভাপতি সফিউদ্দিন আহমেদ, রাসিক কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু, গৃহকর্মিদের পক্ষে কুলসুম খাতুন, জান্নাতুল ফেরদৌসসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর প্রতিনিধিবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর জুন মাসের ১৬ তারিখ গৃহকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক গৃহকর্মী দিবস পালিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর মাসব্যাপী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচারণা ও কার্যক্রম পরিচালনা করছে অক্সফ্যাম। ইতোমধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই পেশায় নিয়োজিত প্রায় ১৮,০০০ নারী গৃহকর্মীদের পেশাগত ও জীবন দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে শোভন কাজের সুযোগ সৃষ্টি এবং সার্বিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

১৮ লাখ জলবায়ু বাস্তুচ্যুত ও রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের প্রতি অক্সফ্যামের আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা : জোরপুর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক ও জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে গত এক দশকে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের মতো জলবায়ু সংশ্লিষ্ট কারণে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত বাংলাদেশের ১৮ লাখ মানুষের সংকট নিসরণ ও পুনর্বাসনে পদক্ষেপ গ্রহণে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ। বিশ্ব শরণার্থী দিবস ২০২৪- উপলক্ষে বৃহস্পিতবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।

অক্সফ্যামের সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়সহ পানি সংক্রান্ত দুর্যোগ অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যূত সৃষ্টির পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মতো বিপর্যয়কে প্রভাবিত করছে। এই মুহূর্তে দেশের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার শিকার, যা মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় রেমালে ৪৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৪৬ জেলার কৃষির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে যা এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। এটি দেশের ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ তৈরি করেছে।

একই সঙ্গে বাংলাদেশের কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে ২০১৭ সাল থেকে অবস্থানরত প্রায় ১০ লাখ (৯৮১,০৬৪) মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষগুলো শতশত রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে সীমানায় আশ্রয় নিতে বাধ্য করছে, যা দেশের শরণার্থী সঙ্কটে নতুন অস্থিরতা তৈরি করছে। এমন পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা ও টেকসই সমাধানের জরুরি প্রয়োজনের উপর জোর দিচ্ছে অক্সফ্যাম।

অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশিষ দামলে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর বৈষম্যগুলো উন্মোচন করে দিয়েছে। ক্রমাগত জলবায়ু সংশ্লিষ্ট দুর্যোগ দেশের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি আরও বাড়াচ্ছে, একটি দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে। এমন অবস্থায় সংকট নিরসনে বিশ্বব্যাপী পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। বিশেষত, ধনী দূষণকারী দেশগুলিকে অবশ্যই তাদের কার্বন নির্গমন হ্রাস করতে হবে, বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলিতে যথাযথ জলবায়ু অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। কারণ জলবায়ু অভিযোজন অর্থের প্রয়োজন; দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতি ব্যবস্থা এবং সামাজিক সুরক্ষার জন্য অর্থায়ন প্রয়োজন।’

পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে জোরপুর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সমর্থন, উদ্যোগ ও সংহতির প্রয়োজন বলেও মনে করছে অক্সফ্যাম।

দামলে বলেন, ‘আমাদেরকে অবশ্যই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীসহ সকলকে রক্ষা করতে হবে। তাদের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।’

সার্বিকভাবে, বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কাছে একযোগ্য জলবায়ু অন্যায্যতা এবং শরণার্থী সঙ্কট মোকাবিলায় এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।