Advertisement

আন্দোলনের মুখে তামীরুল মিল্লাত টঙ্গীতে পদত্যাগ করেছেন মাওলানা মহতাব উদ্দিন

বিশেষ প্রতিনিধি : তামীরুল মিল্লাত টঙ্গীতে মাদ্রাসা ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা টঙ্গীর সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মহতাব উদ্দিন।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ছাত্রদের আন্দোলনে উত্তাল ছিল তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা টঙ্গী ক্যাম্পাস। ছাত্রদের একদফা এক দাবি ছিল সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মহতাব উদ্দিন এর পদত্যাগ। সময়ের পরিক্রমায় আন্দোলন আর সুদৃঢ় হতে থাকলে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মিজানুর রহমান এর নিকট পদত্যাগ পত্র জমা দেন মাওলানা মহতাব উদ্দিন। মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মিজানুর রহমান তার পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, মাওলানা মহতাব উদ্দিন তার চাকরীর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। বারবার তিনি মুচলেকা দিয়ে চাকরিতে ফিরে আসলেও দুর্নীতি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেননি। বিগত স্বৈরাচার আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নেরও অনেক চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন বিগত দিনগুলোতে। তিনি স্বৈরাচার আওয়ামীলীগের সহযোগিতায় মাদ্রাসার সকল বিভাগীয় জায়গায় একক আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। তার ভয়ে শিক্ষকরা পর্যন্ত কোন কথা বলার সাহস করতেন না। তার ব্যবহার ছিল খুবই নিম্ন পর্যায়ের।

আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আফজাল জানান, অসংখ্য ছাত্রের নাম সংশোধনের নামে হয়রানি করেছেন তিনি। ছাত্রদের কাছ থেকে অধিক পরিমাণে টাকা আত্মসাৎ করতেন। যেই কাজে খরচ ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা সেই কাজে অফিসে বসে তার দালালদের মাধ্যমে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা করে নেয়ার রেকর্ডও আছে তার। আমার এক বড় ভাই সাব্বির আহমেদ গত রমজানে যখন অফিসে যোগাযোগ করে, তার সার্টিফিকেটের ফ্রেশ কপি তথা চার কপি কাগজ তুলবে যার জন্য তার কাছে চাওয়া হয়েছে ৬৫০০ টাকা। সে মাদ্রাসা অফিসে খবর নিয়ে জানতে পারলো যে অফিসিয়াল খরচ সর্বোচ্চ ২৫০০ টাকা। ততক্ষণে সাব্বির আহমেদ মাদ্রাসা ভিপি মহোদয়কে বিষয়টা অবগত করা হয়। তিনি অফিসে এসে কথা বললে ৬৫০০ টাকার কাজ ৩৩০০ টাকায় সম্পূর্ণ করে দেয়ার আশ্বাস দেন। তবুও নানান অজুহাতে তাকে হয়রানি করা হয়। এভাবে মাদ্রাসার সকল অফিসিয়াল জায়গায় দিনের পর দিন কোন এক অজানা শক্তিকে পুঁজি করে দুর্নীতি করে আসছিলেন মাওলানা মহতাব উদ্দিন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের থেকে মাদ্রাসার এক সিনিয়র কামিল শ্রেণীতে পড়ুয়া আকরাম খান জানান, দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে আমি এই ক্যাম্পাসে পড়ালেখা করে আসছি। মাওলানা মহতাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা সময় নানান অভিযোগ কিছু দিন পর পর উঠে আসে। দীর্ঘদিন পড়ার সুবাদে মাদ্রাসার দায়িত্বশীল সম্মানিত শিক্ষকদের সাথে মাদ্রাসার নানান বিষয়ে কথা বলার সুযোগ হয়। নাম জানাতে অনিচ্ছুক কিছু শিক্ষক আমাকে সোনালী ভোর এর প্রতিনিধিকে করেছেন এই অভিযুক্ত মাহতাব উদ্দিন মাদ্রাসার নির্মাণের কাজে লক্ষ লক্ষ টাকার কমিশন খেয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। নির্মাণ বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, হোস্টেল এবং অফিসে একক আধিপত্য বিস্তার ছাত্র এবং অভিভাবকদের সাথে খারাপ আচরণ করে আসছিলেন তিনি।

ফাজিল শ্রেণীতে পড়ুয়া নাহিদ হাসান জানান, বিগত স্বৈরাচারের দোসরদের সাথে গভীর সম্পর্ক রেখে মাহতাব উদ্দিন নানান অপকর্ম করে আসছেন। আমরা কিছুদিন আগে মাদ্রাসার ভিপি আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ এর এক বক্তব্যতে শুনেছি কে-বা কারা নাকি আমাদের ক্যাম্পাসের অফিসিয়াল কাগজপত্র নিয়ে দীর্ঘদিন ঝামেলা করে আসছিল। ক্যাম্পাসকে সামনের দিকে পথ চলতে বাধাগ্রস্ত করে রেখেছেন। পরবর্তীতে আমরা কিছু ছাত্র এই বিষয়ে অধিক আগ্রহ থেকে তদন্ত করতে থাকি কে এমন ক্ষতি করলো আমাদের ক্যাম্পাসের এতদিন অফিসিয়াল কাগজপত্র আটকিয়ে রেখে। আমরা এক পর্যায়ে জানতে পারি মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মহতাব উদ্দিন একক ক্ষমতার মাধ্যমে আওয়ামী স্বৈরাচার দোসরদের সাথে গভীর সম্পর্ক করে এমন কাজ করেছেন।

মাদ্রাসা কেন্দ্রীয় ছাত্র-সংসদ (টাকাসু)’র ভিপি আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মহতাব উদ্দিনকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকে নানান লেখালেখি করে আসছিল ছাত্র এবং অভিভাবকরা। আজ ২৩ সেপ্টেম্বর উল্লেখিত বেশ কিছু দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত তথ্য প্রমাণসহ সকাল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে একদফা এক দাবি মাওলানা মহতাব উদ্দিনের পদত্যাগ চাই। একপর্যায়ে মাওলানা মহতাব উদ্দিন সকল অভিযোগ গ্রহণ করে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ পত্র জমা দেন মাদ্রাসা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর নিকট।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *